পুলিশের চাকরির বেতন কত বা পুলিশের চাকরির ডিউটি কত ঘন্টা বা ডিউটি কেমন এই বিষয় নিয়ে অনেকেই আমাকে ফেইসবুকে মেসেজ করেন, তাই ভাবলাম আজকে এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। প্রথমেই আলোচনা করি পুলিশের ডিউটি নিয়ে।
পুলিশের ডিউটি কত ঘন্টা?
বাংলাদেশ পুলিশের কোন নির্দিষ্ট ডিউটি/ কাজের সময় নাই। আপনাকে ২৪ ঘন্টায় ডিউটির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যেকোন সময়ে আপনাকে ডাকা হতে পারে, আর কর্তৃপক্ষ আপনাকে ডাকলে আপনি যেতে বাধ্য।
তবে ডিউটির ক্ষেত্রে যদি আপনি কনস্টেবল র্যাংকে ভর্তি হয়ে থাকেন তবে আপনাকে একটু বেশি’ই কষ্ট করতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশ ডিপার্টমেন্টে সব চাইতে বেশি ও কষ্টকর ডিউটি করে কনস্টেবল। পুলিশের চাকরিতে কোন দৈনিক ৮ বা ১২ ঘন্টা এরকম কোন ডিউটি নাই। আপনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১২ ঘন্টা বা তার বেশিও অনেক সময় ডিউটি করা লাগতে পারে, আবার অনেক সময় আপনার ২৪ ঘন্টায় এক ঘন্টাও ডিউটি করা নাও লাগতে পারে।
আপনি যদি পুলিশ কনস্টেবলে ভর্তি হন, তবে আপনার সব ভাইতে বিরক্তিকর ডিউটি হবে – ২/৪, ৩/৬, ৪/৮, ৬/১২, ১২/১২ এই ধরনের ডিউটি গুলো।
এখানে ২/৪ বলতে বুঝানো হয় আপনাকে ২ ঘন্টা ডিউটি করতে হবে অত:পর আপনার ৪ ঘন্টা বিশ্রাম, তারপর আবার ২ ঘন্টা ডিউটি করতে হবে। এভাবে ডিউটি চলবে মোট ২৪ ঘন্টা, অর্থাৎ একদিন একরাত। এভাবে যদি আপনার ডিউটি হয় ৪/৮ সেক্ষেত্রে আপনি ৪ ঘন্টা ডিউটি করার পর ৮ ঘন্টা রেস্ট পাবেন। এর মানে হলো যদি আপনি সকাল ৬ টা থেকে ডিউটি শুরু করেন তবে
৪ ঘন্টা পর অর্থাৎ ১০ টায় ডিউটি শেষ করে আপনি ৮ ঘন্টা রেস্ট করবেন। ৮ ঘন্টা পর আবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত ডিউটি করবেন, তারপর পুনরায় ৮ ঘন্টা রেস্ট। এভাবে আপনার ২৪ ঘন্টা বা একদিন শেষ হলো অর্থাৎ সারাদিনে মোট ৮ ঘন্টা ডিউটি করলেন ও ১৬ ঘন্টা রেস্ট।
এভাবে এই ডিউটি যদি আপনি সকাল ১০ টা থেকে শুরু করতেন তবে তা দুপুর ২ টা পর্যন্ত চলত আবার পুনরায় রাত ১০ টা থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত চলমান থাকত। অর্থাৎ এই চাকুরিতে আপনার কোন দিন রাতেএ হিসেব নাই, আছে শুধু ঘন্টা আর তারিখের হিসাব। এভাবেই ২/৪ বা ১২/১২ ডিউটি গুলোও হয়ে থাকে। তবে আপনি যদি কম্পিউটার জানেন বা গাড়ি চালাতে জানেন অথবা অন্য কোন বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা থাকে যেমন – ইলেক্ট্রিসিয়ান বা প্লাম্বার তাহলে আপনাকে এই অস্ত্র নিয়ে রেগুলার ডিউটি গুলো করতে হবে না।
এই ২/৪ বা ৪/৮ ডিউটি কে বলা হয় সেন্ট্রি ডিউটি যা এই চাকুরীর সব চাইতে বিরক্তিকর ডিউটি। এই ডিউটি ছাড়াও আপনার জন্য আরো অনেক ডিউটি রয়েছে। রাস্তায় টহম ডিউটি, অভিযান ডিউটি, আইন শৃঙ্খলা ডিউটি, হরতাল ডিউটি, ভিআইপি ডিউটি সহো আরো অনেক কিছু।
রাস্তায় টহল ডিউটি বলতে বুঝানো হয় আপনি আপনার টীম নিয়ে গাড়িতে করে আপনার ডিউটি এলাকায় ঘুরে বেড়াবেন কোথাও কোন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে কিনা সেটা দেখার জন্য। এটা দিনে রাতে যে কোন সময় হতে পারে।
একিই ভাবে অভিযান ডিউটি হলো কোন বিশেষ অপারেশন! যেমন মাদক বিরোধী অভিযান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান, উচ্ছেদ অভিযান বা জঙ্গি অভিযান। প্রকৃত পক্ষে অভিযান ডিউটি হলো কোন স্থানে মাদক/ অস্ত্র/ জঙ্গি আছে বা থাকার সম্ভাবনা আছে সেখানে অভিযান করে অপরাধীদের গ্রেফতার করা ও অবৈধ মালামাল উদ্ধার করা।
এছাড়াও যখন দেশে হরতাল/ অবরোধ বা কোন জটিলতার সৃষ্টি হয় তখন সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্যও আপনাকেই সেখানে পাঠানো হবে যেটাকে বলা হয় রায়ড ডিউটি। এছাড়াও কোন ভিআইপি পার্সন মুভমেন্ট করলে তার নিরাপত্তার স্বার্থে রাস্তায় হতে পারে আপনার ডিউটি। এছাড়াও ভিআইপি জায়গা যেমন এয়ারপোর্ট, সচিবালয়, হাইকোর্ট সহ এরকম যেসব ভিআইপি জায়গা রয়েছে এগুলোর নিরাপত্তার কাজও করে থাকে পুলিশ।
এছাড়াও যদি আপনি ট্রাফিক/ হাইওয়ে পুলিশ স্থানান্তরিত হন তবে তখন আপনাকে রাস্তায় ট্রাফিক ডিউটি করতে হবে। একইভাবে রেলওয়ে পুলিশে স্থানান্তরিত হলে আপনাকে রেলওয়ে থানা/ ট্রেনে নিরাপত্তা ডিউটি করতে হবে। একিই ভাবে নৌ পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও অন্যান্য ইউনিটের জন্য রয়েছে আলাদা আলদা ডিউটি।
এছাড়াও আপনাকে কোন বিষেশ ব্যক্তির বডিগার্ড/ গানম্যান/ রানার হিসেবেও রাখা হতে পারে। বডিগার্ড ও গানম্যানের কাজ একিই ওই ব্যক্তিকে নিরাপত্তা প্রদান করা আর রানার/ অর্ডারলির কাজ হলো ওই ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করা পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট এর মতো।
আমি এতোক্ষণ যেগুলো বর্ননা করলাম এছাড়াও পুলিশের আরো অনেক দায়িত্ব রয়েছে যেগুলো এভাবে বলে বুঝানো সম্ভব না, তারপরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জিজ্ঞেস করবেন অবশ্যই।
সকল পুলিশের প্রধান দায়িত্ব হলো দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও আইন প্রয়োগ করা। জনগণের ও সরকারের জান, মাল, সম্পত্তির রক্ষা করা।
এতোক্ষণ তো বললাম কনস্টেবল র্যাংকে ভর্তি হলে আপনার ডিউটি কি। এবার আসা যাক অফিসার পদে ভর্তি হলে আপনার ডিউটি/ দায়িত্ব কি! (যদিও বাংলাদেশ পুলিশের আইন অনুযায়ী পুলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রতিটি সদস্য’ই একজন পুলিশ অফিসার, তবুও আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে এখানে এসএসআই থেকে উপরের অফিসারদের অফিসার হিসেবে বললাম) যদি আপনি কনস্টেবল থেকে প্রমোশন পেয়ে এ এস আই হোন তখন আপনার ডিউটি ওই একিই থাকবে তবে আপনার ডিউটির সময় কমে আসবে ও আপনি ডিউটিতে একজন টীম লিডার হিসেবে। আপনি আপনার টীম নিয়ে ডিউটি করবেন ও তাদের নির্দেশনা দিবেন আপনার নির্দেশ মতো সবাই ডিউটি করবে। এছাড়াও থানা পর্যায়ে এ এস আই এর অতিরিক্ত দায়িত্ব হলো আপনি মামলা তদন্ত করবেন ও ডিউটি অফিসার হিসেবে থাকবেন।
একজন সাব ইন্সপেক্টর এর ডিউটিও প্রায় এ এস আই এর ডিউটি মতো’ই। সে ডিউটি টীমের কমান্ডার হিসাবে থাকবে ও থানায় মামলা তদন্ত পরিচালনা করবে। তবে যখন আপনি সাব ইন্সপেক্টর থেকে প্রমোশন পেয়ে ইন্সপেক্টর হবেন, তখন আপনাকে প্রত্যক্ষ ভাবে কোন ডিউটি করতে হবে না। তখন আপনার কাধে থাকবে বিশাল দায়িত্ব। আপনি থানায় থাকলে সেখানে অফিসার ইন চার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থাৎ আপনার থানা এলাকা কিভাবে ভাল থাকবে কিভাবে আইন শৃঙ্খলা ঠিক থাকবে সেটা আপনার দায়িত্বে থাকবে। থানার কনস্টেবল ও অন্যান্য অফিসার আপনার আদেশমতো কাজ করবে।
আর যদি আপনি ইন্সপেক্টর থেকে প্রমোশন পেয়ে এ এসপি হন বা সরাসরি এ এসপি তেই ভর্তি হোন তবে আপনার কাজ হবে আপনার অধিনস্ত যেসব পুলিশ অফিসার রয়েছে তাদের পরিচালনা করা।
পুলিশের সকল র্যাংক ও পদমর্যাদা জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
পুলিশের চাকরির বেতন ও স্কেল –
অন্যান্য সকল সরকারি চাকরির মতো পুলিশের বেতনও প্রতি বছর ৫% হারে বৃদ্ধি পায়। এই পুলিশের সকল র্যাংকের জন্যই সমান ভাবেই কার্যকর। এছাড়াই বেতনের পাশাপাশি আপনি পাচ্ছেন রেশন সুবিধা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, অস্ত্র ভাতা সহ আরো অনেক কিছু। মোট কথা হলো সকল কিছু একত্রে আপনার বেতন হবে প্রায় আপনার বেসিকের সমান বা কিছু কম। তাহলে এখন পুলিশের সকল র্যাংকের স্কেল সম্পর্কে আলোচনা করি।
- আইজিপি – ৮২০০০ (সিনিয়র সচিব)পদমর্যাদা
- অতিঃ আইজিপি – ৭৮০০০ গ্রেড ১ পদমর্যাদার ৪ জন।
- ডিআইজি – ৬৬০০০
- অতিঃ ডিআইজি – ৫৬৫০০
- এসপি – ৪৩০০০
- অতিরিক্ত এসপি – ৩৫০০০
- সিনিয়র এএসপি – ২৯০০০
- এএসপি – ২৩১০০
- পরিদর্শক – ২২০০০
- সাব ইন্সপেক্টর/ সার্জেন্ট/ টিএসআই – ১৬০০০
- এএসআই/ এটিএসআই – ১১০০০
- নায়েক – ১০২০০
- কনস্টেবল – ৯০০০
আপনাদের এই বেতন স্কেল প্রতি বছরের জুন- জুলাই মাসে ৫% হারে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও চাকুরী শেষে সরকারের কাছে থেকে এককালীন টাকাও পাবেন অন্যান্য সরকারি চাকুরিজীবী দের মতোই। এছাড়াও বিনামূল্যে পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তো থাকছেই।
যাই হোক, এই হলো পুলিশের বেতন স্কেল ও ডিউটি কত ঘন্টা সেটা নিয়ে আজকের আলোচনা। এই বিষয়ে আপনাদের কারো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানাবেন, আমি অবশ্যই আপনাদের প্রশ্মের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।