অনলাইন ইনকামের সেরা ৫ টি উপায় ঘরে বসে (২০২৩)

বর্তমানে যে কতো অনলাইন ইনকাম এর পথ আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। প্রথম দিকে মনে করা হতো অনলাইনে সবকিছু হলে হয়তো বেকারত্বের হার অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু বর্তমানে অনলাইনের জন্যই বেকারত্বের হার অনেক কমে এসেছে। তো আজ আমি অনলাইনে ইনকাম করার কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। আমার আজকের আলোচনাই যে বিষয় গুলো থাকছে সেগুলোই বর্তমানে অনলাইনে ইনকামের ক্ষেত্রে সবথেকে বেশী জনপ্রিয় বিষয়। তো বেশি কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করি।

ইউটিউব থেকে অনলাইন ইনকাম

বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে বড় ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউব। পৃথিবীর অনেক লোক বর্তমানে ইউটিউবিং করে ইনকাম করছে। ইউটিউবে আপনিও ইনকাম করতে পারেন। তবে এর জন্য আপনার থাকতে হবে কোনো বিষয়ে ভালো অভিজ্ঞতা।

ধরুন আপনি রান্না ভালো পারেন। আপনি ভালো ভালো খাবার তৈরির পদ্ধতি ইউটিউবে আপলোড করতে পারেন!

এখন ইউটিউব থেকে ইনকাম কীভাবে হয়?

ইউটিউব থেকে ইনকামের মুল উৎস হলো গুগল অ্যাডসেন্স। গুগল অ্যাডসেন্স হলো একটি বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক। গুগল অ্যাডসেন্সে বিভিন্ন ছোট বড় কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপন দেই। যারা বিজ্ঞাপন দেই তারা গুগলকে কিছু টাকা দেই। এরপর যখন আপনার ভিডিওতে গুগলের বিজ্ঞাপন গুলো দেই তখন গুগল কিছু টাকা রেখে আপনাকে বাকি টাকা দিয়ে দেই। তবে ইউটিউবে সহজে আপনি বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবেন না।

প্রথমে আপনার ইউটিউব চ্যানেলে কমপক্ষে এক হাজার সাবাস্ক্রাইব থাকা লাগবে। এরপর আপনার আপলোডকৃত সকল ভিডিওর মোট ওয়াচটাইম চার হাজার ঘন্টা হওয়া লাগবে। তারপর আপনার ভিডিও ইউটিউবের পলিসি অনুযায়ি লিগাল হতে হবে। অর্থাৎ সকল ভিডিও আপনার নিজস্ব হতে হবে। কোনো কপিরাইট থাকলে আপনি মনিটাইজেশন পাবেন না।

যুক্তির খাতিরে ধরুন আপনি কোনোভাবে মনিটাইজেশন পেলেন না। তবুও আপনি স্পোন্সার নিয়ে অনেক বেশি ইনকাম করতে পারবেন। তাছাড়া আপনি আফিলিয়েট মার্কেটিং করেও ইনকাম করতে পারেন। চাইলে আপনি আপনার অনলাইন বিজনেস ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমে প্রমোট করতে পারেন। ইউটিউব নিয়ে পরবর্তী পোস্টে বিশদ আলোচনা করা হবে।

ব্লগিং করে অনলাইন আয়!

ব্লগার এবং ওয়ার্ডপ্রেস দুইটি প্লাটফর্মেই আপনি ব্লগিং করতে পারেন। ওয়ার্ডপ্রেস হলো পেইড অর্থাৎ আপনাকে এর জন্য টাকা খরচ করতে হবে আর ব্লগার হলো ফ্রি যা গুগল প্রভাইড করে থাকে। ব্লগার একটি গুগলের প্লাটফর্ম। ব্লগারের প্রতিষ্ঠাতা পাইরা ল্যাবস। তবে 2003 সালে গুগল ব্লগার কিনে নেই। ব্লগার দিয়ে আপনি ফ্রি লেখালেখির ওয়েবসাইট বানাতে পারেন। ইউটিউবের মতো ব্লগারেও গুগল অ্যাডসেন্সের বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে ইনকাম করা যায়। আস্তে আস্তে ব্লগার অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বর্তমানে অনেকে ব্লগারকে নিজের পেশা হিসেবে গ্রহন করেছে।

ব্লগিং করতে হলে আপনাকে লেখালেখি করতে হবে। যেমন অনেকে গল্প লেখে টাকা আয় করে ঠিক তেমনি ব্লগিং করেও আপনি টাকা ইনকাম করতে পারেন। তবে ব্লগিং করার ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মেনে আপনাকে কন্টেন্ট লিখতে হবে। প্রথমত আপনার কন্টেন্ট হতে হবে সম্পুর্ণ কপিরাইট মুক্ত অর্থাত কারো লেখা কন্টেন্ট কপি করা যাবে না। দ্বিতীয়ত আপনার কন্টেন্ট হতে হবে এসইও ফ্রেন্ডলি। এসইও কি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য এই আর্টিকেল টি পড়ুন।

এবং আপনার ওয়েবসাইটের ডিজাইন হতে হবে প্রফেশনাল। তবে আপনি যদি এই গুলো না পারেন তাহলে বিভিন্ন জায়গা থেকে কন্টেন্ট কিনতে পারেন। আর ভালো কোনো ওয়েব ডিজাইনার কে দিয়ে নিজের ওয়েবসাইট ডিজাইন করিয়ে নিতে পারেন।

এখন আপনি যদি গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভ না পান তাহলে আফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম করতে পারবেন। তবে প্রধান বিষয় হলো আপনার ওয়েব সাইটে বেশি ভিজিটর থাকতে হবে। এর জন্য আপনাকে ভালো একটি নিশ বেছে নিতে হবে। আপনার ওয়েবসাইট যে বিষয় নিয়ে তৈরী তাকে নিশ বলে। ধরুন আপনি টেকনোলজি সমন্ধে ব্লগারে পোস্ট করে থাকেন। তাহলে আপনার নিশ হবে টেকনোলজি।

নিশের থেকে কিওয়ার্ড বেশি জরুরি। কিওয়ার্ড হলো একটি শব্দ বা শব্দ গুচ্ছ। ধরুন আপনি ইউটিউব নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখছেন তাহলে আপনার কিওয়ার্ড হবে ইউটিউব। পরবর্তীতে ইনশাল্লাহ ব্লগার নিয়ে আরো আলোচনা করা হবে।

এছাড়াও ব্লগিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমেও আয় করতে পারেন। আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে কিভাবে আয় করবেন সেটি জানতে এই পোস্ট পড়ুন।

ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অনলাইন ইনকামঃ

ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় অনলাইন ইনকামের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং বেশি জনপ্রিয়। বাংলাদেশের অনেক তরুন তরুনী ফ্রিল্যান্সিং পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। আপনিও চাইলে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। তবে এর জন্য আপনাকে দক্ষ হতে হবে।

আপনি যত বেশি দক্ষ হবেন আপনার ইনকাম তত বেশি হবে। আগে ফ্রিল্যান্সিং কি সেই সম্পর্কে একটু ধারনা থাকা দরকার। ধরুন একজন বা একটা বড় কোম্পানির একটি কন্টেন্ট রাইটার দরকার। এখন আপনি ভালো কন্টেন্ট লিখতে পারেন। আপনার প্রোফাইল দেখে তারা আপনার প্রতি ইন্টারেস্টেড হলো। এখন আপনি তাদের খুশি করার মতো কন্টেন্ট লিখে দিলেন।

এখন আপনি যেহেতু আপনার মুল্যবান সময় ও মেধা দিয়ে তাদের কন্টেন্ট লিখে দিলেন এখন তার বিনিময়ে তারা আপনাকে পারিশ্রমিক দেবে। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে প্রচুর কাজ আছে। এখন আপনি কোন কাজটি ভালো পারেন সেটি আপনাকে খুজে করতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আপনি বিভিন্ন কোর্স করতে পারেন।

বাংলাদেশে যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তাই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। তাছাড়া রবি টেন মিনিট স্কুলের উদ্যোগে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং শেখার সুযোগ করে দিয়েছে। মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

এফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকামঃ

এফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে কথা বলার আগে আমাদের আফিলিয়েট মার্কেটিং কি সেটা জানা দরকার। ধরুন আপনি কোনো কোম্পানির একটি পন্য বেচতে সাহায্য করলেন। এখন এর প্রতিদানে তারা আপনাকে ঐ পন্যের উপরে কিছু কমিশন দেবে। এটাই মুলত আফিলিয়েট মার্কেটিং।

আফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য সবথেকে জনপ্রিয় প্লাটফর্ম হলো অ্যামাজন। তবে বাংলাদেশের অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকেও আফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। আফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য আপনার একটি ওয়েবসাইট, গ্রুপ অথবা একটি ভালো কমিউনিটি থাকা লাগবে। আপনি যদি একটি অনলাইন মার্কেটের কোনো কোম্পানির পন্য বেচতে সাহায্য করেন তাহলে সেই পন্যের উপরে তারা কিছু কমিশন আপনাকে দেবে। ফেসবুক গ্রুপ এবং পেজের ক্ষেত্রে আফিলিয়েট মার্কেটিং করেই লোকে বেশি ইনকাম করে।

আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন এই আর্টিকেল থেকে।

ফেইসবুক মার্কেটিং এর মাধ্যমে অনলাইন ইনকামঃ

বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে বড় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক। বর্তমানে ফেসবুক অনেক বড় মার্কেটপ্লেস হয়ে উঠেছে। ফেসবুক থেকে চাইলে আপনি ভিডিও আপলোড বা প্রডাক্ট মার্কেটিং ইত্যাদির মাধ্যমে ইনকাম করতে পারেন। তাছাড়া ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমেও অনেক মানুষ ইনকাম করছে।

আপনি চাইলে ফেসবুকে আপনার কোনো অনলাইন বিজনেস করতে পারেন। সোশ্যাল মার্কেটিং বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেগুলোই করতে পারেন। তবে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে আপনি ইউটিউবের মতো ইনকাম করতে পারবেন। আপনার ভিডিও যদি ফেসবুকে আপলোড দেন তাহলে ফেসবুক আপনার ভিডিওতে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখাবে সেগুলোই মুলত আপনার ইনকাম। তবে তার আগে আপনার ভিডিওতে ত্রিশ হাজার ওয়াচটাইম পুরন করা লাগবে।

আপনি যদি একজন ভালো কন্টেন্ট ক্রিয়েটোর হয়ে থাকেন তাহলে এই মাইলস্টোন পুরন করা আপনার জন্য কঠিন হবে না।

তাছাড়া আপনার যদি বড় ফেসবুক গ্রুপ থাকে তাহলে আফিলিয়েট মার্কেটিং করেও ইনকাম করতে পারেন। তাছাড়া আপনার কোনো অনলাইনে বিক্রি করার যোগ্য কোনো প্রোডাক্ট থাকলে তা বেচে ইনকাম করতে পারবেন। বেশিরভাগ লোক বর্তমানে ফেসবুকের মাধ্যমে বিজনেস করছে। আপনিও চাইলে সেই দলে সামিল হতে পারেন। পরবর্তীতে ফেসবুক নিয়ে আরো বিশদ আলোচনা করা হবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

তো আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তীতে এই সব বিষয় গুলোর বিশদ আলোচনা করা হবে। অনলাইনে ইনকামের সমন্ধে বলবো অনলাইনে ইনকাম করা তেমন কঠিন কিছু নই। অনেকে ভাবে অনলাইনে ইনকাম করতে হলে অনেক বেশি অভিজ্ঞ হতে হয়। আসলে তেমনটা না। আপনার যদি প্রযুক্তি সমন্ধে একটু জ্ঞান থাকে তাহলে আপনি অনায়াসে অনলাইন থেকে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারেন। বর্তমানে অনেক লোক অনলাইন থেকে ইনকাম করে সাবোলম্বী হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে আস্তে আস্তে অনলাইনে ইনকামের পথ সুগম হচ্ছে। তো আর কথা বাড়াচ্ছি না। পরবর্তী পর্বে আমি ইউটিউব, ব্লগার, ফেসবুক ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হবে। তত দিন সবাই ভালো থাকবেন। সবার সুসাস্থ্য কামনা করছি।

ধন্যবাদ সবাই কে।

1 thought on “অনলাইন ইনকামের সেরা ৫ টি উপায় ঘরে বসে (২০২৩)”

Leave a Comment