ইন্টারনেট কি:
আমরা যদি ইন্টারনেট শব্দকে বিশ্লেষণ করি, দেখবো দুইটি ইংরেজি শব্দ ইন্টার( inter) ও নেট (net) থেকে এর উৎপত্তি, যাদের যথাক্রমে বাংলা মানে পরস্পর সংযুক্ত ও জাল; মানে এমন জাল যা পরস্পরকে সংযুক্ত রাখে তাই ইন্টারনেট। যদি আমরা ভালোভাবে চিন্তা করি তো দেখবো আসলেই ইন্টারনেট আমাদেরকে জালের মত সংযুক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। যার অর্থ একটি বিশাল জাল যা একাধিক কম্পিউটারগুলোকে পরস্পর সংযুক্ত করে রেখেছে। বিশ্বের সবচেয়ে সুবিশাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো ইন্টারনেট।
কোটিকোটি মোবাইল, ট্যাপ, কম্পিউটার এর মাধ্যমে গড়ে উঠা একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক হলো ইন্টারনেট। প্রায় যেকোন ধরণের তথ্য সংগ্রহ, বিশ্বের যেকোন জায়গা থেকে যে কারোর সাথে যোগাযোগ, তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিভিন্ন অসাধ্যকে সাধ্য করেছে এই ইন্টারনেটের ব্যবহার।
ইন্টারনেট হলো পারস্পর সংযুক্ত থাকা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কম্পিউটার সমুহের সমন্নয়ে গঠিত একটি গ্লোবাল সিস্টেম।
internet এর পূর্নরুপ হলো interconnected networks।
আবার অনেক সময়, “word wide web” তথা Web কেও ইন্টারনেট বলা হয়। ইন্টারনেট এমন একটি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক যে যার মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত কম্পিউটার নিজেদের মধ্য তথ্য বা ডেইটার আদান-প্রদান করতে পারে। যেমন আমরা যে ইমেইল, অনলাইন চ্যাটিং, ভিডিও কনভারেন্স, ই কমার্স ট্রানজেকশন, সোসাল নেটওয়ার্কিং, ফাইল আপলোড বা ডাউনলোড করে থাকি তার সবকিছুই এই ইন্টারনেটের বদৌলতে।
ইন্টারনেট প্যাকেট রাউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কাজ করে, যা ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল প্রটোকল(TCP) ও ইন্টারনেট প্রটোকল(IP) এর মাধ্যমে সংযুক্ত।
ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস:
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে যে, কে সৃষ্টি করলো এই বিশাল ইন্টারনেট সিস্টেম? এর আবিষ্কারক কে? এর মালিক কে?
আসলে ইন্টারনেটের কোন মালিক নেই বা আমরা সবাই এর মালিক।
এবং কোনো একজন ব্যক্তি বা বিজ্ঞানীর জন্য একা ইন্টারনেট সৃষ্টি করা অসম্ভব। যদিও কিছু বিজ্ঞানীর বেশি অবদান আছে এই ইন্টারনেট সৃষ্টিতে। তবে সর্বপোরি অসংখ্য বিজ্ঞানীর নিরলস পরিশ্রমের ফসল হলো আজকের এই ইন্টারনেট, অনেক গবেষণায়, অনেক সাধনায় এই সিস্টেম তৈরি হয়েছে। কোন একক ব্যক্তির প্রচেষ্টায় ইন্টারনেটের আবিষ্কার হয়নি।
আসলে আমেরিকার সৈন্যদের জন্য প্রথমে নেট এর ধারণার আবিষ্কার হয়। কারণ তারা একটি বড়, ভালো, নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা বিল্ড আপ করতে চেয়েছিল।
ইন্টারনেটের ইতিহাস 1950 এর দশকে কম্পিউটারের বিকাশের সাথে শুরু হয়েছিল। ইন্টারনেট সম্পর্কে প্রথম জনসাধারণের উপলব্ধি আসে যখন কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক লিওনার্ড ক্রেইনরক তার আরপানেট ব্যবহার করে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তার গবেষণাগার থেকে স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (এসআরআই) একটি বার্তা পাঠান। নেটওয়ার্কের দ্বিতীয় অংশ সেখানে স্থাপন করা হয়েছে। 1970-এর দশকের শেষের দিকে এবং 1970-এর দশকের শুরুতে, যুক্তরাজ্যের সাইক্লিডিসএনপিএল, মেরিট নেটওয়ার্ক, টিমনেট এবং টেলিনেটের মতো প্যাকেট-সুইচড নেটওয়ার্কগুলি বিভিন্ন মার্ক I প্রোটোকল ব্যবহার করে আপডেট করা হয়েছিল। বিশেষ করে, ARPANET একটি নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য ইন্টারনেট ওয়ার্কিং প্রোটোকলের বিকাশকে সহজতর করেছে।
ARPANET এর পরিধি 1981 সালে প্রসারিত হয়, যখন ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (NSF) কম্পিউটার সায়েন্স নেটওয়ার্ক (CSNAT) আপডেট করে এবং 1986 সালে আবার NSFNET মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুপার কম্পিউটার সাইটের জন্য গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রবেশাধিকার প্রদান করে। বাণিজ্যিক ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISPs) 1980-এর দশকের শেষের দিকে এবং 1990-এর দশকের প্রথম দিকে আবির্ভূত হতে শুরু করে। 1990 সালে অর্পানেট বন্ধ হয়ে যায়। 1995 সালে ইন্টারনেট একটি বাণিজ্যিক পণ্য হয়ে ওঠে, যখন NSFNet এর অস্তিত্ব বন্ধ হয়ে যায় এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর সর্বশেষ বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা গৃহীত হয়।
সংক্ষেপে ইন্টারনেটের গুরুত্বপূর্ণ সময়/ সালঃ
- 1969 সালে, ARPANET নামে একটি নেটওয়ার্ক চারটি কম্পিউটারের সংযোগ স্থাপনের জন্য স্থাপন করা হয়েছিল, এবং তারপর অবিলম্বে ইন্টারনেট বিকাশ শুরু করে।
- 1972 সাল নাগাদ, এটির সাথে সংযুক্ত কম্পিউটারের সংখ্যা 37-এ উন্নীত হয়।
- 1973 সালের মধ্যে, এটি ইংল্যান্ড এবং নরওয়েতে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
- 1973 সালে, এটি ইংল্যান্ড এবং নরওয়েতে ছড়িয়ে পড়ে।
- 1980 সালে, ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) এনএসএফনেট প্রশিক্ষণ ও গবেষণা নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করে, যা পরে এআরপিএনেটের সাথে একীভূত হয় এবং নামকরণ করা হয়।
- 1982 সালে, প্রোটোকল নামে পরিচিত নেটওয়ার্কগুলির জন্য সাধারণ নিয়মগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই প্রোটোকল টিসিপি / আইপি (ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল / ইন্টারনেট প্রটোকল) নামে পরিচিত ছিল।
- 1990 সালে, অর্পানেটের সম্প্রসারণ গতি লাভ করে এবং ইন্টারনেট একটি নেটওয়ার্কে পরিণত হয়। লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংযুক্ত।
1990-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে, ইন্টারনেট সংস্কৃতি, বাণিজ্য, এবং নিকট-তাত্ক্ষণিক বার্তা যেমন ই-মেইল, তাত্ক্ষণিক বার্তা, ভয়েস ওভার ভয়েস ইন্টারনেট টেলিফোনি, ইন্টারনেট ফোরাম, ব্লগ, মিডিয়া সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, দ্বিমুখী মিথস্ক্রিয়া সহ, ভিডিও কলিং, এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব। ওয়েব পরিষেবা এবং ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলিতে বৈপ্লবিক প্রভাব ফেলে।
আজ ইন্টারনেট সবধরণের অনলাইন তথ্য, ব্যবসা, বিনোদন এবং সামাজিক নেটওয়ার্কিং এর কাজে ক্রমাগত এক অপরিহার্য উপাদান হয়ে গিয়েছে।
ধন্যবাদ