ওজন কমানোর উপায় | সম্পুর্ন ঘরোয়া পদ্ধতি

আজকের আর্টিকেলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। এই পদ্ধতিটি সময় সাপেক্ষ ও ধৈর্যের ব্যাপার কিন্তু এতে আপনার কোন শারিরীক ক্ষতি বা দুর্বলতার সম্ভাবনা নাই। তাই, যদি আপনি আপনার ওজন কমাতে চান তবে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন ও আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

ওজন কমানোর উপায়

অতিরিক্ত ওজনের কারন কি?

অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাবার বিভিন্ন কারন রয়েছে, যেগুলো পরিহার করে চললে ওজন বাড়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। আর ওজন বেড়ে গেলেও তা সহজে কমানো যায়। ওজন বৃদ্ধির কারনগুলা নিচে বর্ননা করা হলো –

  • অনিয়মিত খাবার- আমাদের ওজন বৃদ্ধির প্রধান ও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কারন হলো অনিয়মিত ও অতিরিক্ত খাবার খাওয়া। খাবার খাওয়ার সময় সুষম খাবার না খাওয়া। সাধারণত আমরা ৩ বেলা খাবার খেয়ে থাকি। এই ৩ বেলা খাবার যদি আমরা প্রতিদিন সঠিক সময়ে না খেয়ে থাকি তাহলে এটা একটি বড় কারন ওজন বেড়ে যাবার। এছাড়াও খাবারের তালিকায় সুষম খাদ্য না থাকা ও অতিরিক্ত চর্বি ও তৈল জাতীয় অথনা ফাস্টফুড, ড্রিংকস থাকাও ওজন বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারন। আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও ডাক্তারের কাছে থেকে নেওয়া পরামর্শ থেকে আমি বলতে পারি এটিই ওজন বৃদ্ধির প্রধান ও প্রথম কারন।
  • সঠিক পরিমাণে পানি পান- হ্যা, সঠিক পরিমাণে পানি পান না করার কারনেও আমাদের ওজন বেড়ে যেতে পারে। আপনি যতবেশি পরিমাণে পানি পান করবেন আপনার শরীর থেকে সেই পরিমাণে ঘামের মাধ্যমে বা অন্য মাধ্যমে পানির সাথে শরীরেএ ক্ষতিকর ও বিশাক্ত পদার্থগুলো বের হয়ে যাবে। আর এটি আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরি একটি বিষয়।
  • শারীরিক পরিশ্রম- আমরা যদি সারাদিন শুয়ে বসে থাকি বা এমন কোন কাজ করি যে কাজে কোন শারীরিক পরিশ্রম নাই। তাহলে এটিই হতে পারে আপনার অতিরিক্ত ওজনের পেছনের একটি অন্যতম কারন। মাত্রই আলোচনা করলাম অতিরিক্ত পানি ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরি। কিন্তু আপনি যদি শারীরিক পরিশ্রম না করেন, সারাদিন এসিতে বসে কাজ করেন তাহলে তো আপনার শরীর ঘামার কোন উপায় নাই, যা আপনার ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারন।
  • মানষিক চাপ- অতিরিক্ত রমানষিক চাপের কারনে বেড়ে যেতে পারে আপনার ওজন! শুনতে অদ্ভুত লাগছে? লাগলেও এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত। অতিরিক্ত মানষিক চাপের কারনে আপনার শরীরের পরিপাকতন্ত্র, হৃদপিণ্ডের সহ আরো অন্যান্য অংশের উপর প্রভাব ফলে যার কারনে বেড়ে যেতে পারে ওজন। এছাড়াও আপনি যদি আপনার মানষিক চাপ বা দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য কোন ঔষধ নিয়ে থাকেন তবে তার প্রভাবেও আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত ঘুম- অতিরিক্ত ঘুম ও দিনের বেলা ঘুমানোর কারনেও ওজন বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও সঠিক সময়ে ঘুমাতে না যাওয়া ও দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা ও একেকদিন একেক সময়ে ঘুমানোর জন্যও আপনার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • সময়ানুবর্তিতা- আপনার দৈনন্দিন কাজ সঠিক সময়ে না করার কারনেও ওজন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। আপনি যদি নিয়মিত খাবার, গোসল, ঘুম এইসব কাজ একিই সময়ে না করে থাকেন তবে এটি হতে পারে আপনার অতিরিক্ত ওজনের কারন।
  • বয়স বৃদ্ধি- আপনার বয়সের বৃদ্ধি আপনি চাইলেও কোন ভাবেই থামিয়ে রাখতে পারবেন না। বলা হয় “সময় ও স্রোত কারোর জন্য অপেক্ষা করে না”। যেহেতু আপনার বয়স আপনার জন্য অপেক্ষা করবে না, তাই আপনাকেই বয়সের সাথে সাথে খাবার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।

অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা বা কুফল কি?

  • আপনি জেনে আশ্চর্য হবেন যে অতিরিক্ত মেদ/ পেটের চর্বি ক্যান্সারের অন্যতম কারন। প্রতিবছর ক্যান্সারে যে পরিমাণ লোক মারা যায় তার দশ শতাংশ অতিরিক্ত ওজনের কারনে।
  • স্মৃতি শক্তি হ্রাস পেতে পারে অতিরিক্ত ওজনের ফলে। অতিরিক্ত ওজনের কারনে আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, যার ফলে মস্তিষ্কের বিকাশে সমস্যা দেখা দেয় ফলে আপনার স্মৃতি শক্তির হ্রাস পেতে পারে।
  • সাধারণ মানুষের তুলনায় অতিরিক্ত ওজন সম্পন্ন লোকদের ডায়াবেটিস বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও আপনার একবার ডায়াবেটিস হলে যদি আপনি অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী হয়ে থাকেন তবে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টকর হয়ে পরবে। এছাড়াও ডায়াবেটিস জনীত সমস্যা গুলোও দেখা দিবে অধিক পরিমাণে।
  • অতিরিক্ত ওজন/স্বাস্থের কারনে মহিলাদের পেটে পাথর হবার সম্ভাবনা অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।
  • অতিরিক্ত ওজনের ফলে আপনার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, কার্যক্ষমতা হ্রাস সহ আরো অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • এছাড়াও সব চাইতে বড় সমস্যা হলো আপনার দৈনন্দিন জীবনের চলাফেরাতে। অতিরিক্ত ওজনের ফলে আপনি স্বাভাবিক ভাবে দৌড়াদৌড়ি, নিয়মিত ভাবে কাজ কিছুই করতে পারবেন না। অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাবেন আপনি। ভাড়ি কোন কাজ করতে গেলে হাফিয়ে যাবেন। তাই এইসব সমস্যা এড়িয়ে চলতে হলে আপনাকে অবশ্যই অতিরিক্ত ওজন এড়িয়ে চলতে হবে।
ওজন কমানোর ঘরোয়া উপায়

ওজন কমানোর উপায় কি?

এখন আমরা জানব, আমরা কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ওজন কমাতে পারি। এইসব ওজন কমানোর উপায় মেনে আপনি সহজেই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, ঘরোয়া পদ্ধতিতে কেন? এর উত্তরে আমি বলব প্রতিটি মেডিসিন’ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমরা যদি কোন মেডিসিনের সহায়তা ছাড়ায় শুধু নিজেদের কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজেদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি তাহলে সমস্যা কোথায়? ঘরোয়া পদ্ধতিতে ওজন কমানোর জন্য এই পদ্ধতি গুলো আপনি অনুসরণ করতে পারেন-

  • সঠিক খাবার- অতিরিক্ত ওজনের প্রধান ও প্রথম কারন সব সব সময়ের জন্য’ই হলো খাবার। অতিরিক্ত খাবার পরিহার ও সঠিক সুষম খাবার গ্রহনের মাধ্যমে আমরা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। খাবার কম খাবার জন্য খাবারের পূর্বে পানি পান করা যেতে পারে এবং সকাল ও সন্ধ্যায় ভাতের পরিবর্তে রুটি অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য খাবারের ব্যাপারে এই পদক্ষেপ গুলো নেয়া যেতে পারে-
    • প্রতিদিন সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ
    • সকালে ও রাতে রুটি খাওয়া
    • খাবারের পূর্বে পানি পান করা
    • খাবারের পরেই ঘুমিয়ে না পরে
    • ফাস্টফুড সম্পুর্ন পরিহার
    • কোল ড্রিংকস সম্পুর্ন পরিহার
    • সুষম খাবার গ্রহন
    • ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ
    • চর্বি জাতীয় খাবার কম খাওয়া
    • শাক-সবজি বেশি খাওয়া
    • খাবার সর্বনিম্ন ১ ঘন্টা পর ঘুমাতে যাওয়া
  • লেবুর ব্যবহার- ওনন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে লেবুর ভূমিকা অন্যতম। কারন লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি যা চর্বি ও কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে গরম পানিতে লেবুর রস ও মধুর শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। এটি দ্রুত ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও সারাদিনের পানিয় ও খাবারের সাথেও লেবু খাওয়া যেতে পারে যা আপনার ওজন কমতে সহায়ক হবে।
  • শারীরিক ব্যায়াম- ওজন কমানোর জন্য শারীরিক ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করা খুবিই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি শুধু মাত্র খাবার নিয়ন্ত্রণ করে যে সময়ে ওজন কমাতে সক্ষম হবেন, সেই সাথে ব্যায়াম করলে আরো অনেক কম সময়েই ওজন কমানো সম্ভব। আপনার পক্ষে যদি জিমে যাওয়া সম্ভব হয় তবে জিমে নিয়মিত যেতে পারেন। আর জিমে যেতে না চাইলে আপনি বাসায় নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন। তবে আপনি যেটুকু সময়ই ব্যায়াম করেন না কেন, সেটা হতে হবে
  • পরিমিত ঘুম- আপনার স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য পরিমিত পরিমানে ঘুম অতিব প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে দিনের বেলায় ঘুম পরিহার করুন এবং রাতের বেলায় একটানা ৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। অবশ্যই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠবেন ও শারীরিক ব্যায়াম করবেন। এখন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেও রাতে ৮ ঘন্টা ঘুমানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে রাতে তারাতাড়ি ঘুমাতে হবে। এভাবে ঘুমানোর ফলে আপনার স্বাস্থ্য ভাল থাকবে ও ওজন ও স্বাভাবিক থাকবে।
  • গ্রিন টি- আমরা প্রায় সবাই-ই কমবেশি চা পান করে থাকি। এটি আমাদের সমাজে অতি প্রচলিত একটি পানিয়। কিন্তু এই সাধারণ চা এর পরিবর্তে যদি আমরা গ্রিন টি পান করি তাহলে সেটি আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রতি কাপ চা ৭০ কিলো ক্যালরি কমাতে পারে। এছাড়াও এই গ্রিন টি আমাদের রোগ প্রতিরোধ খমতা বাড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এমনকি ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে গ্রিন টি-র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

আরো পড়ুন –

আজকের এই আর্টিকেলে আমি মোটামুটি ওজন কমানোর উপায় সব গুলো বর্ননা করলাম যার সব গুলোই ঘরোয়া পদ্ধতিতে। এসবের মাঝে সর্বোচ্চ জরুরি বিষয় হলো আমাদের খাওয়া, ঘুম ও ব্যায়াম। এই তিনটি কাজ সঠিক ভাবে হলেই আমাদের ওজন কমানো সম্ভব। আর হ্যা, এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আপনার এতোদিনে তৈরি হওয়া ওজন তো আর এক সপ্তাহে বা ১৫ দিনে কমানো সম্ভব না। এর জন্য আপনাকে ধৈর্য ধরে এই কাজ গুলো করে যেতে হবে, তাহলেই আপনি ওজন কমাতে সক্ষম হবেন।

Leave a Comment